Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

ধান চাষে পরিবেশসম্মত কৌশল

ধান চাষে পরিবেশসম্মত কৌশল
মৃত্যুঞ্জয় রায়
আমরা প্রায় সবাই জানি যে জলবায়ু বদলাচ্ছে আর এর প্রভাবে এখন ঝড়-জলোচ্ছা¦াস, বৃষ্টি-অনাবৃষ্টি, বন্যা-বজ্রপাত, ঠা-া-গরম ইত্যাদি বেড়ে যাচ্ছে। মূলত বায়ুম-লে গ্রিনহাউজ গ্যাস বৃদ্ধিই জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান কারণ। গ্রিনহাউজ গ্যাসগুলো হলো কার্বন ডাই অক্সাইড (ঈঙ২), মিথেন (ঈঐ৪), নাইট্রাস অক্সাইড (ঘ২ঙ), হাইড্রোফ্লুয়োরোকার্বন (ঐঋঈং), পারফ্লুয়োরোকার্বন (চঋঈং), সালফার হেক্সাফ্লুয়োরাইড (ঝঋ৬) ও নাইট্রেড ট্রাইফ্লুয়োরাইড (ঘঋ৩). গ্রিনহাউজ গ্যাসের মধ্যে কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস প্রধান। এই গ্যাস বেড়ে যাওয়ায় বায়ুম-লের তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। এর পরই রয়েছে মিথেন গ্যাস, যা আমরা রান্নার চুলায় ব্যবহার করি। এটি একটি প্রাকৃতিক গ্যাস, যা পচা জলাডোবা থেকে বের হয়। জলমগ্ন ধানখেত থেকেও মিথেন গ্যাস বের হয়। বিগত ২০০ বছরের মধ্যে বায়ুম-লে মিথেন গ্যাসের ঘনত্ব বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। এ সময়ের মধ্যে আয়তনিকভাবে মিথেন গ্যাসের ঘনত্ব ০.৭ পিপিএম থেকে বেড়ে হয়েছে ১.৭ পিপিএম যা কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস বৃদ্ধির হারের চেয়ে কম। এ সময়ের মধ্যে বায়ুম-লের আয়তনে কার্বন ডাই-অক্সাইড বেড়েছে ২৭৫ পিপিএম থেকে ৩৪৫ পিপিএম। কিন্তু কার্বন ডাই-অক্সাইড বায়ুম-লকে যতটা উত্তপ্ত করছে তার চেয়ে প্রায় ৩০ গুণ বেশি উত্তপ্ত করছে মিথেন গ্যাস। বায়ুম-লে মিথেন গ্যাস বৃদ্ধির বার্ষিক হার প্রায় ১% যা ভবিষ্যতে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য এক বড় হুমকি। বিশ্বে মিথেন নিঃসরণ মাত্র ২০% ঘটছে প্রাকৃতিক উৎস থেকে এবং ৮০% নিঃসরিত হচ্ছে মানুষের ক্রিয়াকলাপের দ্বারা। সম্প্রতি জলমগ্ন ধানখেত মিথেন গ্যাস নিঃসরণের জন্য অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
সম্প্রতি ওয়ার্ল্ড ডাটা সেন্টার ফর গ্রিনহাউজ গ্যাসেস (ডউঈএএ) পর্যবেক্ষণ করেছে যে, বছরে গড়ে বাতাসে মিথেন গ্যাস মেশার পরিমাণ ১৮৫৩+২ পিপিবি (ঢ়ধৎঃং ঢ়বৎ নরষষরড়হ)। তাদের হিসেব মতে, বিগত দশকে প্রতিবছর বাযুম-লে মিথেন গ্যাস বৃদ্ধির পরিমাণ প্রায় ৬.৮ পিপিবি যার জন্য ধানখেতকে অন্যতম কারণ হিসেবে তারা দায়ী করেছে। বৈশ্বিক বাযুম-লে গড়ে প্রায় ১০ শতাংশ মিথেন গ্যাস নিঃসরণের জন্য দায়ী ধানখেত। সব ধানখেতের মধ্যে সেচ দিয়ে চাষ করা ধানখেত নিঃসরণ করছে ৭৮% মিথেন গ্যাস। সবচেয়ে বেশি মিথেন গ্যাস ধানখেত থেকে নিঃসরিত হচ্ছে দক্ষিণপূর্ব এশিয়া থেকে, যার পরিমাণ প্রতি বর্গ কিলোমিটারে প্রায় ১০ মিলিগ্রাম ও যা ধানখেত থেকে নিঃসরিত মিথেনের বৈশ্বিক পরিমাণের প্রায় ৯০%, আফ্রিকা থেকে হচ্ছে ৩.৫% ও দক্ষিণ আমেরিকা থেকে হচ্ছে ৪.৭%।
খুব বেশিদিন না হলেও আশির দশকের গোড়ার দিকে ধান ক্ষেত থেকে মিথেন নিঃসরণের কথা জানা যায়। সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় ধানখেত থেকে মিথেন নিঃসরণের ঘটনাটি প্রথম গবেষকদের নজরে আসে।  ধানখেত যখন দীর্ঘদিন ধরে জলমগ্ন থাকে তখন সেখানে আবদ্ধ পরিবেশ সৃষ্টি হয়, অর্থাৎ মাটি বাতাসের অক্সিজেন পায় না। এর ফলে মাটিতে থাকা জৈব পদার্থ পচে মিথেন গ্যাস সৃষ্টি করে। সেই গ্যাস পানিতে বুদবুদ তৈরি করে বায়ুম-লে গিয়ে মেশে। এমনকি ধানগাছের শিকড় ও কা-ের মাধ্যমেও তা যায়। সম্প্রতি জলমগ্ন ধানখেত থেকে কি পরিমাণ মিথেন নিঃসরিত হয় তা পরিমাপ করে দেখা গেছে যে, ধানখেত থেকে বৈশ্বিক মিথেন নিঃসরণের পরিমাণ ২০ থেকে ১০০ টিজি/বছর (আইপিসি, ১৯৯২) যা বায়ুম-লে বিশ্বব্যাপী মোট নিঃসরিত মিথেনের ৬-২৯%।
কিন্তু বাস্তবতা হলো, পানি ছাড়া ধান হবে না। ধান উৎপাদন ব্যাহত হলে তা বিশ্বব্যাপী খাদ্য নিরাপত্তা ও এরূপ পরিবেশের জীববৈচিত্র্য বিলুপ্তির ঝুঁকিতে ফেলে দেবে। এশিয়ার বেশিরভাগ দেশে ধান উৎপাদন করা হয় জলমগ্ন অবস্থায়। আফ্রিকা ও যুক্তরাষ্ট্রেরও অনেক এলাকায় এখন জলমগ্ন ধানচাষের প্রসার বাড়ছে, ইউরোপে কম। ধান চাষ করা হয় সেচনির্ভর, বৃষ্টিনির্ভর ও গভীর জলে। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মিথেন নিঃসরিত হয় সেচ দেওয়া ধানখেত থেকে। অন্য দুই পদ্ধতির ধান চাষের ক্ষেত্রে আসলে নিঃসরিত মিথেন হ্রাসের তেমন কোন উপায় আমাদের হাতে নেই। কিন্তু সেচনির্ভর ধানখেত থেকে মিথেন গ্যাস নিঃসরণ কমানোর জন্য কিছু ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।
সাধারণত রোপা ধান চাষে ধানের চারা লাগানোর পর প্রায় দুই সপ্তাহ ক্ষেতে পানি ধরে রাখা হয়। অধিকাংশ কৃষক সেই পানি সহজে বের করতে চায় না। পানি সরালেই সেখানে আগাছা বেশি জন্মে, যা পরিষ্কার করতে শ্রমিক খরচ বেড়ে যায়। তাই সেচনির্ভর ধানখেতে সাধারণত দীর্ঘদিন ধরে দাঁড়ানো পানি থাকে। এর ফলে এসব ক্ষেত থেকে মিথেন নিঃসরণ বেড়ে যায়। তাই ধানখেতে সবসময় পানি আটকে না রেখে বা অবিরাম সেচ না দিয়ে পর্যায়ক্রমে জমি ভিজিয়ে ও শুকিয়ে দিলে মিথেন নিঃসরণ অনেক কমে। এতে সেচ কম লাগে অথচ ফলন ঠিক থাকে। ধানখেতে অধিক পরিমাণে জৈবসার প্রয়োগ করলে তা প্রায় ৫৮-৬৩% মিথেন নিঃসরণ কমাতে পারে। পতিত জমিতে খড় বিছিয়ে বা মাটিতে ফসফোজিপসামের সাথে মিশিয়ে প্রায় ১১% মিথেন নিঃসরণ কমানো যায়। এক পরীক্ষায় দেখা গেছে যে, ধানের চারা লাগানোর আগে যদি পূর্ববর্তী ফসলের অবশিষ্টাংশ (খড়) জমির মাটিতে চাষ দিয়ে মিশিয়ে দেওয়া যায় তাহলে তা মিথেন কমায়। ইউরিয়া ও অ্যামোনিয়াম সালফেট সার ব্যবহারেও মিথেন নিঃসরণ কমে, তবে এ সার প্রয়োগের ফলে আর একটি গ্রিন হাউজ গ্যাস নাইট্রাস অক্সাইডের নিঃসরণ ঘটে।
থাইল্যান্ডে সেচনির্ভর ধান চাষে চার ধরনের সেচ ও নিকাশ ব্যবস্থারও ওপর মিথেন নিঃসরণের পরিমাণ নিরূপণে এক গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করেন সে দেশের কয়েকজন গবেষক। জনৈক গবেষক ও তাঁর সাথীরা বলেন, ধানের জমি থেকে পানি নিকাশের ব্যবস্থা করতে পারলে মিথেন ও নাইট্রাস অক্সাইডের নিঃসরণ কমতে পারে। পাশাপাশি মিথেন ও নাইট্রাস অক্সাইডের প্রভাবে ধানের ফলনের যে ক্ষতি হয় তাও কমে। তারা মধ্য থাইল্যান্ডে গবেষণার জন্য ধানখেতে চার ধরনের সেচ ও নিকাশ ব্যবস্থাকে বেছে নেন। এগুলো ছিল (১) ধানখেতে সবসময় পানি রাখা, (২) মৌসুমের মাঝামাঝি সময়ে ধানখেত থেকে পানি বের করে দেওয়া, (৩) ধানখেত থেকে একাধিক বার পানি নিকাশের ব্যবস্থা করা ও (৪) স্থানীয় একটি পদ্ধতি অনুসরণ করে নিকাশের ব্যবস্থা করা। গবেষকরা দেখতে চেয়েছিলেন যে, কোন ধরনের নিকাশ ব্যবস্থা আসলে ধানখেত থেকে মিথেন ও নাইট্রাস অক্সাইড গ্যাস নিঃসরণ কমাতে সাহায্য করতে পারে ও ধানগাছের চেহারা এবং ফলনের ওপর কি প্রভাব পড়ে? তাঁরা গবেষণার ফলাফলে দেখতে পান যে, ধানের ফুল ফোটার সময় ক্ষেত থেকে পানি বের করে বা শুকিয়ে দিলে তা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে মিথেন গ্যাস নিঃসরণ কমায়। মজার বিষয় হলো, নাইট্রাস অক্সাইডের নিঃসরণ সম্পর্কিত হলো কতদিন ধানখেতে থেকে পানি বের করে রাখা হলো তার ওপর, কত বার বের করা হলো তার ওপর নয়। গবেষণায় অবশ্য তাঁরা ধানের ফলনের ওপর এরূপ নিকাশের কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব দেখতে পান। তাঁরা গবেষণা ফলাফলে উল্লেখ করেন যে, মাঝ-মৌসুমী নিকাশ ও একাধিক বার নিকাশের প্রভাবে স্থানীয় নিকাশ ব্যবস্থার তুলনায় ধানের ফলনের ক্ষতি হয় যথাক্রমে ৬.৯% ও ১১.৪%। তথাপি তা এক মৌসুমে ধানখেত থেকে মিথেন নিঃসরণ কমাতে পারে যথাক্রমে ২৭% ও ৩৫%। ফলনের কিছুটা ক্ষতি মেনে নিয়েও বৃহত্তর পরিবেশগত স্বার্থে গবেষকরা শেষে ধানখেত থেকে মাঝে মাঝে পানি শুকিয়ে দেওয়া বা নিকাশের মাধ্যমে বের করে দেওয়াকে সুপারিশ করেন। ধানখেতে পর্যায়ক্রমে ভিজানো ও শুকানো (এডব্লিউডি) পদ্ধতি অনুসরণ করে সেচ দিলে ধানখেত থেকে মিথেন নিঃসরণের পরিমাণ প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ কমতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন।
জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন অভীলক্ষ্য ১৩ (এসডিজি ১৩)-তে ২০৩০ সালের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন হ্রাসে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ কমানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। জাপান ২০৩০ সালের মধ্যে সে দেশ থেকে ২৫ শতাংশ গ্রিন হাউজ গ্যাস কমানোর পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশেও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ কমাতে কাজ করে যাচ্ছে। বিশেষ করে বৃক্ষরোপণ ও বনসৃজন, ধানক্ষেতে সেচের পানির ব্যবহার ও অবিরাম জলমগ্নতা কমানো, ইউরিয়া সারের ব্যবহার সীমিত করা, জৈবসারের ব্যবহার বৃদ্ধি ইত্যাদি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। তবে পরিমাণগতভাবে জাপানের মতো আমাদেরও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সমম্বয়ে একটি বাস্তবসম্মত লক্ষ্যমাত্রা ও সময় নির্ধারণ করা উচিত এবং সেই লক্ষ্য অর্জনে কৌশল বা স্ট্র্যাটেজি নির্ধারণ করে দ্রুত উদ্যোগ নেয়া দরকার। না হলে জলবায়ু পরিবর্তনের উপর্যুপরি আঘাত আমাদেরই সইতে হবে, বিপন্ন হবে জীবন।

লেখক : অতিরিক্ত পরিচালক (অব:), কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খামারবাড়ি, ঢাকা এবং কৃষি বিশেষজ্ঞ, বাংলাদেশ বন্ধু ফাউন্ডেশন। মোবাইল ০১৭১৮২০৯১০৭, ই-মেইল : kbdmrityun@gmail.com


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon